জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এক সফল নারী রেবেকা খাতুন

জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এক সফল নারী রেবেকা খাতুন

চারঘাট প্রতিনিধি:আসলে হতাশা কোনো সমাধান নয়। চেষ্টা আর সাধনা থাকলে সবকিছুই সম্ভব। আর তেমনটিই করে দেখিয়েছেন রাজশাহী চারঘাট উপজেলার রেবেকা খাতুন নামের এক নারী। নারীরা এখন নানা ক্ষেত্রে অবদান রাখছে। এভারেষ্ট জয় করছে,পাইলট হয়ে বিমান চালাচ্ছে, যুদ্ধ ক্ষেত্রে যুদ্ধ করছে এবং সফলও হয়েছে। কিন্তু নারী হয়ে জীবন যুদ্ধে সংগ্রাম করে সফল হওয়া সবচেয়ে কঠিন। জীবন যুদ্ধে সংগ্রামী এক সফল নারী রেবেকা খাতুন। শুধু মাত্র দু-বেলা দু মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য তিনি ১৫ বছর আগে চায়ের দোকানের মাধ্যমে সংগ্রাম শুরু করে শতভাগ সফলতা পেয়েছেন।

রেবেকা খাতুন চারঘাট বাজারের বড়াল নদীর তীরে হঠাৎ পাড়া গ্রামের বাসিন্দা। একমাত্র ছেলেকে নিয়ে সেখানে থাকেন। তিনি এখন চারঘাট বাজারের চা দোকানী রেবেকা নামে সকলের কাছে পরিচিত।

চায়ের দোকান করে ইতোমধ্যে ছেলেকে স্বাবলম্বী করে তাকেও বিয়ে দিয়েছেন। শুধু চা বিক্রি করেই তিনি ৫ শতক জমি কিনে সেখানে ঘর তুলেছেন।

সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। আজকের এই পরিচয়ের পিছনে আছে এক লম্বা ইতিহাস। প্রায় ২৫ বছর আগে তার স্বামী তাকে ছেড়ে ছেড়ে চলে যায়। নিজস্ব জমিজমা না থাকায় ছেলেকে নিয়ে চোখে অন্ধকার দেখতে থাকেন রেবেকা খাতুন।

আশ্রয় নেন অন্যের জমিতে। সংসারে পরিশ্রমী কেউ না থাকায় অনাহারে অর্ধাহারে কাটতে থাকে দিন। বাধ্য হয়ে এক সময় অন্যের দোকানে তিন বেলা খাওয়াসহ সামান্য কিছু বেতনে কাজ শুরু করেন। দীর্ঘদিন বিভিন্ন দোকানে কাজ করেছেন।

কিন্তু এভাবে কতদিন চলে, ফলে এক সময় তিনি নিজেই নামেন সংগ্রামের পথে। হিতাকাংঙ্খী দু এক জনের পরামর্শে এনজিও থেকে ৫ হাজার টাকা ঋন নিয়ে শুরু করেন চায়ের দোকান।

ছেলে ও ছোট বোনকেও সহোযোগীতার জন্য রেখে দেন। দোকানটি বাজারের সদরে হওয়ায় অল্প দিনেই জনপ্রিয়তা পায় সকলের কাছে। কোনো মতে তিন বেলা খেয়ে আস্তে আস্তে টাকা জমিয়ে পুঁজি বাড়িয়ে চায়ের সাথে যোগ দেয় বিস্কুট, কেকসহ বিভিন্ন হালকা নাস্তার পণ্য। এতে আরও জনপ্রিয়তা বাড়ে রেবেকা খাতুনের চায়ের দোকানের।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা হতে সরকারি অফিসগুলোতে ব্যাংকে কাজের জন্য আসা মানুষগুলো কাজের ফাঁকে একটু অবসরই যেন বিলকিস বেগমের চায়ের দোকান। সেখানে গেলে এককাপ চাও হয় সাথে স্বল্প মূল্যে ক্ষুধা নিবারনের জন্য আছে কলা, বিস্কুট ইত্যাদি।

উপজেলার শলুয়া ইউনিয়নের ব্যাবসায়ী তহিদুল ইসলাম বলেন, আমি একজন ব্যাবসায়ী হওয়ায় বিভিন্ন কাজে চারঘাটে আসি। আমি বাজারে আসলেই এই দোকানে হাল্কা নাস্তা ও চা খেতে আসি। আমি সেই থেকেই দেখছি ছোট্ট এক বাচ্চাকে নিয়ে তিনি চা বিক্রি করছেন। তার ব্যবহার ও তার তৈরি চা দুটোই আমার ভাল লাগে তাই অন্য দোকানে না গিয়ে এখানে আসি।

সংগ্রামী নারী রেবেকা খাতুন বলেন, ‘চা বিক্রি করে দিনে ১৫শ হতে দুই হাজার টাকার মত বিক্রি হয় এতে লাভ থাকে ২০০ হতে ৩০০ টাকা। ছেলেকেও বিয়ে দিলাম এই ব্যবসা করেই। জমি কিনে থাকার ঘরও করেছি এই ব্যবসা করে একটু একটু করে জমিয়ে। তবে নানা শারীরিক রোগে আক্রান্ত হয়ে কষ্টে আছি। আর কতদিন এভাবে সংগ্রাম করতে পারবো জানিনা। দোয়া করবেন আগামী দিন যেন এভাবেই কাটাতে পারি।

এ বিষয়ে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সাইফুল ইসলাম বাদশা বলেন, রেবেকা জীবন যুদ্ধে জয়ী একজন সফল নারী। সরকারীভাবে উপজেলা পর্যায়ে সংগ্রামী নারীদের সম্মাননা দেওয়া হয়। সেখানে আমরা পরবর্তীতে জীবন সংগ্রামে জয়ী নারী রেবেকা দেখতে চাই।

মতিহার বার্তা ডট কম  ০৭ জুলাই ২০১৯

খবরটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply